Logo
×

Follow Us

জলবায়ু পরিবর্তন

নজিরবিহীন জলবায়ু পরিবর্তনে শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৩, ২৩:৫২

নজিরবিহীন জলবায়ু পরিবর্তনে শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে যেভাবে তাপমাত্রা ও সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের বরফের স্তর গলে যাওয়ার ক্ষেত্রে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে তাতে রীতিমত শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, যে রকম দ্রুত গতিতে এবং যে সময়ের মধ্যে এসব রেকর্ড ভাঙা-গড়া চলছে তা 'নজিরবিহীন'।

জাতিসংঘ বলছে, ইউরোপজুড়ে যে তাপপ্রবাহ চলছে তা আরও রেকর্ড ভাঙতে পারে। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব নজিরবিহীন রেকর্ড জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিনা তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা কঠিন, কারণ আবহাওয়া ও মহাসাগরের আচরণ খুবই জটিল। এসব নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা‒ খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।

লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানের লেকচারার ড. পল সেপ্পির মতে, 'পৃথিবী এখন লাগামহীন পরিবর্তনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে' যার পেছনে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে ঘটা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং ২০১৮ সাল থেকে প্রথম 'এল নিনো'র প্রভাবে পৃথিবীর গরম হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়গুলো।

এল নিনো প্রকৃতি গরম হয়ে ওঠার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা হয় যখন প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণমণ্ডলীয় অংশে সমুদ্রের তপমাত্রা স্বাভাবিকের ওপরে উঠে যায়, যার প্রভাবে প্রকৃতি গরম হয়ে ওঠে।

এ বছর গ্রীষ্মে চারটি রেকর্ড ভাঙা অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা গেছে। এ বছরের জুলাই মাসে ছিল এ যাবৎ পৃথিবীতে উষ্ণতম দিনের রেকর্ড। ২০১৬ সালে বিশ্বে গড় উষ্ণ তাপমাত্রার যে রেকর্ড ছিল এবারের তাপমাত্রা তাকে ছাড়িয়ে গেছে।

এবার প্রথমবারের মত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। ইইউর জলবায়ু পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপার্নিকাস জানাচ্ছে, ৬ জুলাই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭.০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তেল, কয়লা ও গ্যাসের মত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে যে কার্বন নিগর্মণ হচ্ছে পৃথিবীর ক্রমশ গরম হয়ে ওঠার পেছনে সেটাই বড় কারণ।

ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের আরেক জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ফ্রেডেরিকো অটো বলছেন, গিনহাউস গ্যাস থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়া ঠেকানো না গেলে এমনটাই ঘটবে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছিল। এর জন্য মানুষই দায়ী বলে মনে করেন তিনি।

ড. ফ্রেডেরিকো অটো বলেন, 'আমি যে কারণে বিস্মিত সেটা হলো‒ জুনে যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড ভাঙছে। বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে এত তাড়াতাড়ি এমনটা ঘটার কথা নয়।'

তিনি বলছেন, এল নিনোর প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে, কিন্তু সেটার প্রভাব এত তাড়াতাড়ি দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক।

বিশ্বব্যাপী মহাসাগরের তাপমাত্রা মে, জুন ও জুলাইয়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রার যে রেকর্ড হয়েছিল, বর্তমান তাপমাত্রা দ্রুত তাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের তাপমাত্রা যে অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়ছে তাতে বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে শঙ্কিত।

পৃথিবীর আবহাওয়া যেমন আশঙ্কাজনকভাবে উষ্ণ হয়ে উঠছে, তাতে দক্ষিণ মেরু সাগরের বরফের স্তর উদ্বেগজনক হারে গলে যাচ্ছে। তবে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের ড. ক্যারোলাইন হোমস বলছেন, স্থানীয় আবহাওয়ার কারণে অথবা মহাসমুদ্রের কারেন্টের ফলেও এটি ঘটতে পারে। তিনি বলছেন, শুধু রেকর্ড ভাঙার কারণেই যে তারা উদ্বিগ্ন তা নয়, যে মাত্রায় রেকর্ড ভাঙছে সেটাও তাদের ভাবাচ্ছে।

ড. ক্যারোলাইন হোমস বলেন, 'জুলাই মাসে এই পরিমাণ বরফ গলা আমরা আগে কখনও দেখিনি। এর আগে বরফ গলে যে মাত্রায় নেমে এসেছিল এই মাত্রা তার আরও ১০ শতাংশ নিচে। এট বিশাল। যে দ্রুত হারে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে তার কারণ যে আমাদের কাছে এখনও কতটা ধাঁধাঁর মত এটা তার আর একটা উদাহরণ।'

আসলে যে দ্রুত পরিবর্তনগুলো ঘটছে আর যে দ্রুত গতিতে আগের রেকর্ডগুলো ভাঙছে সেটাই বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করছে। তারা আগামীতে আবহাওয়া মণ্ডলে আরও রেকর্ড ভাঙা অঘটনের আশঙ্কা করছেন। ২০২৪ সালেও নানা দুর্যোগ ঘটবে বলে তারা মনে করছেন।_বিবিসি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫